DCCCUL Logo
Banner
DCCCUL Founder
Home Products Gallery Notice Contact Us

ধরেন্ডা খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ-এর ইতিকথা

সৃষ্টির আরম্ভ থেকে মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করে আসছে ঈশ্বর নিজেই চেয়েছেন মানুষ পরিবার গঠন করে, সমাজবদ্ধ হয়ে, একে অপরের ভাল-মন্দ সহভাগিতা করে জীবন যাপন করুক। মানবজাতি তার চলার পথে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে, গোত্রে গোত্রে, জাতিতে জাতিতে, দেশে দেশে, মাঝে মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। এরূপ সংঘাত পর্যায়ক্রমে বহুবিদ নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এ সকল সমস্যা মোকাবেলা ও সমাধান কল্পে যুগে যুগে নুতন নুতন পন্থা বা উপায়ের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এরকম প্রয়োজন যখন প্রকট আকার ধারণ করেছে, তখনই কোন বিশেষ ব্যক্তিত্বের অনুপ্রেরণায়, নিজ নিজ চেষ্টায়, একে অপরের সহযোগিতায় বা অন্য কোন গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থায় মানুষ নতুন কোন বস্তু, পদ্ধতি, উপায়, ইত্যাদির উদ্ভব ঘটিয়েছে। একটি প্রবাদ বাক্য প্রচলিত আছে। যেমনঃ “দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ” বা “দশের লাঠি একের বোঝা” ।

আমাদের সমাজেও আমরা এ প্রচলিত কথার প্রয়োগ নানাভাবে দেখতে পাই। গ্রামে অথবা কোন এলাকায় কোন সমস্যা যদি বৃহত্তর জনগোষ্ঠির অমঙ্গলের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন দেখা যায় প্রায় ক্ষেত্রে জনগণ যৌথভাবে সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হয়। পারিবারিক ক্ষেত্রেও আমরা দেখি, পরিবারের বৃহত্তর প্রয়োজনে পরিবারের সকল সদস্য-সদস্যা মিলিতভাবে কাজে অবতীর্ণ হয়ে থাকে। নেতৃত্ব থাকে দু’চার জনের হাতে, কিন্তু কাজ হয় সহযোগিতা ও সহভাগিতার মাধ্যমে। এরকম কাজের পদ্ধতিকে অন্য কথায় আমরা বলতে পারি সমবায় ভিত্তিক কাজ বা সমৃবেত প্রচেষ্টায় কাজ করা।

জগৎ গতিময় ও পরিবর্তনশীল। মানুষের চাহিদার বা প্রয়োজনের শেষ বলে কিছু নেই। "The more you have, the more you want"। সময় ও কালের আবর্তনে মানুষের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, নুতন নুতন ব্যবস্থা, ব্যবহারিকবস্তু, খাদ্যাভ্যাস, পোষাক-পরিচ্ছদ, চালচলন, সমাজ ব্যবস্থা, আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ইত্যাদির পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংয়োজন, বিয়োজন, গ্রহণ, বর্জন, সংকোচন, উন্নয়ন এবং নব নব আবিস্কারের প্রয়োজন দেখা দেয়। তাই আমরা দেখতে পাই মানুষের চাওয়া ও পাওয়ার অন্ত নেই। মানুষ চন্দ্রে পদাপর্ণ করেও খান্ত থাকতে পারেনি। তাকে যেতে হবে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে। গতিই হলো মানব জীবনের নুতন নুতন দিকদর্শন, অনুশীলন ও উন্নয়ন।

এই গতিময় ও পরিবর্তশীল পৃথিবীতে অঞ্চল ভিত্তিক একেক পরিস্থিতিতে সামাজিক, আর্থিক, পরিবেশগত, নৈতিক, আধ্যাত্মিক এরকম বহুবিদ অবয়মান চরম পরিস্থিতির মোবাবেলায় দেখা যায় নানাবিধ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ও সৎগুণের অধিকারী মহামানবের আর্বিভাব হয়। ঠিক এমনি অবস্থায় ও পরিস্থিতিতে, এ দেশের খ্রীষ্টান সমাজে সহযোগিতার মনোভাব, মিতব্যয়িতা, সঞ্চয়ী হওয়ার অভ্যাস তথা সর্বোপরি আর্থিক দৈন্যদশার উন্নয়নের প্রয়োজন যখন প্রকট ভাবে অনুভুত হয়, সে সময় যে মহান এক ব্যক্তিত্বের আর্বিভাব হয় তাঁর নাম স্বর্গীয় শ্রদ্ধেয় ফাদার চালর্স জে, ইয়াং, সিএসসি। এই মিশনারী ফাদার তার দুরদর্শীতায় নিরীণ করে সুষ্পষ্টভাবে প্রত্য করে চিহ্নিত করেছিলেন যে, আমাদের খ্রীষ্টান সমাজের বিবিধ অবয়মান অবয়বের মধ্যে প্রধান হলো “আর্থ-সামাজিক অবয়”। তাই তিনি ডাক দিয়ে পথ দেখালেন ও নির্দেশ দিলেন আর্থ- সামাজিক উন্নয়নের এক বিশেষ ধরণের সমবায় আন্দোলনের। ঢাকা শহরের তখনকার সময়ের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ - ফাদার ইয়াং এর এই অভুত পূর্ব ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৫৫ সালে গঠন করেন The Christian Co-operative Credit Union Ltd. Dhaka। এ সমিতির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল এ দেশের গোটা খ্রীষ্টান সমাজের পরিবারগুলোর সহযোগিতার মনোভাব গড়া, মিতব্যয়িতার অভ্যাস গড়ে তোলা, সঞ্চয়ী মনোভাব গঠন এবং সর্বোপরি সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করা। সকল খ্রীষ্টান সমাজের প্রতি ফাদার ইয়াং এর এই ডাক ছিল একটি নুতন দিক নির্দেশনা, সাড়া জাগানো ও ঘুম ভাঙ্গোনোর এক প্রচন্ড ঝাঁকুনী। এ ঝাকুনী ও ধাক্কায় আমাদের ঘুম ভাঙ্গল, সহযোগিতার মনোভাব গঠিত হলো এবং আমাদের গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর আর্থিক উন্নতির একটি অধ্যায় সুচিত হলো।

ধরেন্ডা খ্রীষ্টান সমবায় সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি লিঃ এর ইতিকথা আরও বিস্তৃত ও বৈচিত্রময় ঘটনায় সমৃদ্ধ। এ সমিতির নাটকীয় ও বৈচিত্রময় ঘটনা প্রবাহ অনেক। তাই অতি সংক্ষেপে এর ইতিকথা নিম্নে আলোকপাত করা হলঃ

আজ ধরেন্ডা খ্রীষ্টান সমবায় সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি লিঃ এর সুবর্ণ জয়ন্তী বা ৫০ বর্ষপুর্তি উৎসব পালন করা হচ্ছে। এই উৎসব উৎযাপনের আসল গৌরব কার? এ প্রশ্ন সম্পর্কে বলতে গেলে সমিতি গঠনের প্রাক্কালে অত্র এলাকার খ্রীষ্টান পরিবারগুলোর আর্থ- সামাজিক দৈন্যদশার একটি জীবন্ত চিত্র অংকন করা প্রয়োজন। এ সময়ে অত্র এলাকায় খ্রীষ্টান পরিবার প্রতি কৃষি উপযোগী ভূমি ছিল গড়ে প্রায় ২০ বিঘা করে। উচু জমিতে ছোট, মাঝারি, বড় কাঁঠাল বাগান ছিল প্রতিটা পরিবারে। কৃষি উপযোগী ভূমিতে উপযুক্ত চাষাবাদের অভাবে ফলন হতো নুন্যতম। তাই সাংসারিক খরচ মেটানোর নিমেত্তে পরিবারগুলো মূলতঃ কাঁঠাল বাগানের উপর নির্ভরশীল ছিল। নগদ অর্থের জরুরী প্রয়োজনে প্রায় পরিবারের পুরুষ প্রধাণগণ চলে যেতেন টাকা ধার প্রদানকারী অর্থ লোভী সুচতুর মহাজনদের নিকট। এই সকল চিহ্নিত মহাজনদেরকে কর্তা, “মিয়াসাব” “দাদাভাই” ইত্যাদি আরও অনেক নামে সম্ভোধন করা হতো। এ সকল মহাজনদের অতি লাভ জনক ব্যবসাই ছিল ধারে টাকা খাটানো। এ সময় অত্র এলাকায় উচ্চ পর্যায় লেখাপড়ার গড় দৌঁড় ছিল খুব নিম্নে। টাকা ধারপ্রদানকারী মহাজনগণ একটি অলিখিত ষ্ট্যাম্প কাগজের যথাস্থানে সই বা বৃদ্ধাঙ্গুলের টিপ রেখে মৌখিক বয়ান উল্লেখ করে টাকা ধার দিতেন। মৌখিক বয়ানে উল্লেখ থাকতো ধার দেওয়া টাকার পরিমাণের উপর ১০টা বা ১৫টা বা তার অধিক কাঁঠাল গাছের কথা। মহাজনগণ দুই বা তিন বৎসর পর্যন্ত কাঁঠাল ফল পুরোপুরি ভোগ দখল করতেন। ইহার পর মৌসুম মত (কাঁঠাল গাছে নতুন ফল আসার পূর্বে) ধার করা সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দিতে গেলে অনেক তাল বাহানা করে তারা অখুশী মনে ফেরত নিতেন। মহাজনদের বড় একটা সুবিধাজনক কৌশল ছিল সেই অলিখিত স্ট্যাম্প কাগজগুলো। ইচ্ছা করলে এ কাগজ তারা টাকা ধার করা ব্যক্তির সমস্ত বা আংশিক স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি অনায়াসেই লিখে নিয়ে মস্ত বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারত। এ কারণে টাকা ধার করা ব্যক্তিবর্গ প্রায় সময় দুঃচিন্তায় ভোগতেন। অনুরূপ অনেক ঘটনা ঘটেছে এবং গ্রাম্য শালিশের মাধ্যমে সুবিচার না পেয়ে, সমাধান মেনে নিতে বাধ্য হতেন। এরূপ ব্যবস্থাপনায় টাকা ধার করে পরিবারের আর্থিক উন্নতি করা দূরের কথা, মহাজনদের টাকা কিভাবে ফেরত দেওয়া যায় এ দুঃশ্চিন্তার দিন কাটাতে হতো। যতই দিন যেত জটিলতা ততই বাড়ত। পরিবারগুলো ধার করা টাকা অনেক ক্ষেত্রেই সময় মত ফেরত দিতে পারত না এবং দিন দিন আরও দেনা করে মহাজনদের নিকট এমনভাবে আটকে যেত যে অনেক সময় নিজের গাছের কাঁঠাল মহাজনদের নিকট হতে ক্রয় করে নিজেদের খেতে হতো। এরূপ দুঃখ জনক পরিস্থিতিতে পরিবারগুলো আর্থিক দিক দিয়ে পঙ্গু হতে হতে পারিবারিক শান্তি শৃঙ্খলার চরম অবনতির অবস্থায় মানসিক যন্ত্রণার কারখানায় পরিণত হয়ে উঠলো। অন্য কথায় বলা যায় “পেটে নেই ভাত মাথায় হল হাত” অবস্থা।

ধরেন্ডা ধর্মপল্লীর অধিকাংশ খ্রীষ্টান পরিবারই যখন এমনি এক অকল্পনীয় দুর্বিসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থায় এসে দাঁড়ালো, ঠিক তখন ১৯৫৯ সনের নভেম্বর মাসে ধরেন্ডাতে আগমন ঘটলো ক্ষণজম্মা অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন এক মহামানবরূপী মিশনারী সুপুরুষ শ্রদ্ধেয় ফাদার লিও সালিভ্যান, সিএসসি’র। ফাদার সালিভ্যান এসে প্রথমে যখন দেখলেন ধরেন্ডা ধর্মপল্লীর খ্রীষ্টান পরিবারগুলো এরূপ দৈন্যদশায় ভুগছে তখন ভুক্তভোগী পুরুষ/মহিলারা তাদের দুরবস্থার কথা একে একে জানাতে থাকলে বিশেষভাবে মহিলাদের দুরবস্থা দেখে ফাদার সালিভ্যানের দরদী হৃদয়ে প্রচন্ড এক আলোড়ন সৃষ্টি করলো। স্বভাবতঃ তিনি ছিলেন মানব দরদী, গরীবের বন্ধু ও মায়াভরা হৃদয়ের অধিকারী। বিশেষ করে দুঃস্থ বিধবা মহিলাদের প্রতি তার করুণার কথা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি ছিলেন জ্ঞানী, সুচিন্তিত, সুদুর প্রসারী দৃষ্টিভঙ্গীর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন জ্ঞানীয়মান এক মিশনারী মহাপুরুষ। তিনি তাঁর দিব্য জ্ঞানে বুঝতে পেরেছিলেন অনেক ক্ষেত্রে দারিদ্রের তাড়নায় ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভাল মানুষকেও বিবেকহীন করে তোলে এবং এ অবস্থায় অনেক জঘণ্য অপরাধ ও অপকর্মে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। তিনি আরও বুঝতে পেরেছিলেন আর্থিক অনুদান মানুষকে দিন দিন খুঁড়া করতে করতে একদিন নিজের উপর আস্থা নষ্ট হয়ে যায় এবং ব্যক্তি জীবনকে অকর্মণ্য করে তোলে।

তাই ফাদার সালিভ্যান ১৯৬০ সনের জানুয়ারী মাসের কোন একদিন ধর্মপল্লীর বয়স্ক পুরুষ ও মহিলাদের এক সভা ডেকে তাদের সঙ্গে সামাজিক, পারিবারিক ও আর্থিক সমস্যাদি নিয়ে গঠরমূলক বিস্তারিত আলাপ- আলোচনা করলেন। পূর্বেই বলা হয়েছে অত্র ধর্মপল্লীর পরিবারগুলোর বাৎসরিক অর্থকরী ফসলই ছিল কাঁঠাল ফল। এই কাঁঠাল নিয়েই টাকা ধার প্রদানকারী লোভী মহাজনদের ছিল যতসব বাড়াবাড়ি। ফাদারের সুন্দর প্রস্তাবে “কাঁঠাল ফান্ড” নামে একটি সমবায় ভিত্তিক ফান্ড গঠন করার সিদ্ধান্ত এই সভায় একবাক্যে গ"হীত হয়। আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যে সকল পরিবার এ মুহূর্তে ঋণগ্রস্থ হয়ে চরম দুরব¯'ায় রহিয়াছে তাদেরকে প্রথমে এ ফান্ড হতে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে ও কিস্তিতে ঋণ দেওয়া হবে, যাতে তারা অতি সত্বর মহাজনদের নিকট হতে তাদের কাঁঠাল বাগান উদ্ধার করতে পারে। মহাজনদের নিকট হতে কাঁঠাল বাগান মুক্ত করে এ বাগান ফান্ডের অধীনে ন্যস্ত করা থাকবে। ঋণ গ্রহণকারী/কারীনী নিজেই কাঁঠাল বিক্রয় করে “কাঁঠাল ফান্ড” রূপ সমিতি হতে ঋণ গ্রহণ করা টাকা পরিশোধ করতে থাকবে। ফাদার সালিভ্যানের এই গঠনমূলক ও জন কল্যাণকর প্রস্তাব উপস্থিত সকলেই একবাক্যে গ্রহণ করে ফাদারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানান।

এরপর ফাদার ঢাকায় খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন হতে পাশ বই এনে স্বল্প সংখ্যক পুরুষ এবং সার্বিক ভাবে সাড়া জাগানো সচেতন মহিলাদেরকে “কাঁঠাল ফান্ড” রূপ সমিতির সদস্য/সদস্যা করতে থাকেন। প্রারম্ভিক পর্যায়ে নামেমাত্র মাসিক শেয়ার জমা গ্রহণ করে “কাঁঠাল ফান্ড” - এর কাজ আরম্ভ করেন। এ পর্যায়ে “কাঁঠাল ফান্ড”- এর কাজ চালানোর জন্য লিখিত কোন নিয়মাবলী ছিল না। শুধু সদস্য-সদস্যাদের পাশ বই ও বড় লেজার বই ব্যবহার করে নিজ দায়িত্বে এবং নিজে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে ভাল হয় মনে করতেন, সেভাবে “কাঁঠাল ফান্ডে” - এর কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। “কাঁঠাল ফান্ড” রূপ সমিতির সদস্য-সদস্যা হবার জন্য কোন দরখাস্ত প্রয়োজন হত না। এভাবে দিন দিন সদস্য-সদস্যা বাড়তে থাকলো এবং ঋণ গ্রস্ত পরিবারগুলো আস্তে আস্তে মহাজনদের খপ্পর হতে মুক্ত হতে থাকলো।

এরপর ফাদার ঢাকায় খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন হতে পাশ বই এনে স্বল্প সংখ্যক পুরুষ এবং সার্বিক ভাবে সাড়া জাগানো সচেতন মহিলাদেরকে “কাঁঠাল ফান্ড” রূপ সমিতির সদস্য/সদস্যা করতে থাকেন। প্রারম্ভিক পর্যায়ে নামেমাত্র মাসিক শেয়ার জমা গ্রহণ করে “কাঁঠাল ফান্ড” - এর কাজ আরম্ভ করেন। এ পর্যায়ে “কাঁঠাল ফান্ড”- এর কাজ চালানোর জন্য লিখিত কোন নিয়মাবলী ছিল না। শুধু সদস্য-সদস্যাদের পাশ বই ও বড় লেজার বই ব্যবহার করে নিজ দায়িত্বে এবং নিজে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে ভাল হয় মনে করতেন, সেভাবে “কাঁঠাল ফান্ডে” - এর কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। “কাঁঠাল ফান্ড” রূপ সমিতির সদস্য-সদস্যা হবার জন্য কোন দরখাস্ত প্রয়োজন হত না। এভাবে দিন দিন সদস্য-সদস্যা বাড়তে থাকলো এবং ঋণ গ্রস্ত পরিবারগুলো আস্তে আস্তে মহাজনদের খপ্পর হতে মুক্ত হতে থাকলো।

ইতিমধ্যে অন্য বড় এক সমস্যা দেখা দিল মাহিলা সদস্যাদের নিয়ে। মাসে মাসে এই সদস্যাগণ কোথা হতে নগদ অর্থ পাস বইয়ে জমা দিবে? পরিবারের পুরুষ প্রধাণগণই ছিলেন নগদ অর্থের উপার্জনকারী ও মালিক। পরিবারের অনেক পুরুষ প্রধানের কোন আস্থা ও বিশ্বাস ছিল না এই “কাঁঠাল ফান্ড”-এর উপর। এ অবস্থায় ফাদার সালিভ্যানের কাঁধে ভর করে অধিকাংশ মহিলাগণ নিজ নিজ পরিবারের উদ্ধার কর্তারূপ প্রভু সেজে, অতি সাহসের সহিত এগুতে থাকে। তারা বাড়ীতে হাঁস মুরগী, কবুতর, ছাগল পোষা আরম্ভ করলো এবং হাঁস-মুরগীর ডিম বিক্রির টাকা মাঝে মাঝে মুরগী, ছাগল ইত্যাদি বিক্রয়ের টাকা ”কাঁঠাল ফান্ড”-এ নিজ নামে জমা করতে লাগলো। স্বামীদের অজান্তে তাদের পকেটের পয়সা ”কাঁঠাল ফান্ড”-এ জমা দেওয়ার কারণে কোন কোন মহিলা সদস্যা স্বামীদের মারধোর খেয়ে নানাভাবে অত্যাচারিত হয়েছেন। এমনি এক অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে অধিকাংশ মহিলাদের অতি কষ্টের পয়সা “কাঁঠাল ফান্ড”-এ জমা হয়ে বড় একটি মূলধনের রূপ নিল। কোন কোন ক্ষেত্রে ফাদার নিজেই মহাজনদের ডেকে এনে, ঋণগ্রস্ত পরিবারের ঋণের টাকা সরাসরি মহাজনদের হাতে তুলে দিতেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে ঋণগ্রস্ত পরিবার গুলির বন্ধকী কাঁঠাল বাগান ও জমাজমি মূল মালিকের হাতে আসতে থাকলো। ফাদার সালিভ্যান গড়া ও চালিত “কাঁঠাল ফান্ড”- এর সুফল দেখে ধর্মপল্লীর যে সকল পুরুষ প্রধানগণ ফাদারের এই উত্তম প্রচেষ্টাকে এতদিন স্বীকৃতি দেয় নাই, তারাও তাদের চক্ষু রগরায়ে আরও পরিস্কার ভাবে অবলোকন করতে পারলো, তাদের মহিলা/স্ত্রীরা কি রকম এক দুঃসাহসিক কাজ করতে পারে।

এভাবেই সূচনা হলো নতুন চেতনা ও জাগরণের। মহিলাদের বৃহত্তর সমবায় কাজের সুফল দেখে ধর্মপল্লীর অন্যান্য পুরুষগণ লোভ সংবরণ করতে না পেরে তারাও পর্যায়ক্রমে ফাদারের “কাঁঠাল ফান্ড” এর সদস্য হতে থাকলো। অনেক ক্ষেত্রে মহিলারা তাদের চাওয়া ও পাওয়ার অতি প্রিয় ’রূপার’ ’স্বর্ণের’ গহনাদি পর্যন্ত জামিন স্বরূপ জমা রেখে কাঁঠাল ফান্ড হতে ঋণ গ্রহণ করে পারিবারিক আর্থিক উন্নতিসাধন করতে থাকে। “কাঁঠাল ফান্ড”- এর উন্নতির সাথে সাথে হিসাব নিকাশ রাখার কাজের বহর বাড়তে থাকায়, ফাদার কমলাপুরের স্বর্গীয় মাইকেল কেরু (মাষ্টার) গমেজকে সাহায্যকারী হিসাবে নিয়োগ করেন। প্রথমে তিনি বিনা বেতনে কাজ করতেন। ফাদারের আসল কাজ যদিও ছিল ধর্মপল্লীর প্রৈরতিক কাজ সুষ্ঠুভাবে পালন করা, তিনি কেবল ঐ পর্যন্তই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন নাই। তিনি ধর্মপল্লীর ও অত্র এলাকার আরও উন্নয়নমূলক জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। অনুরূপ কাজের কিছু বর্ণনা না দিলে এ লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাই অতি সংক্ষেপে এ রকম কাজের সামান্য বর্ণনা দেওয়া গেল।

১৯৬১ সনের শেষার্ধে অসুস্ততার কারণে ও চিকিৎসার কারণে ফাদার তাঁর দেশ আমেরিকা চলে যান। সেখানে তিনি প্রায় এক বৎসর কাল ছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে অন্য পাল পুরোহিতগণ ধরেন্ডা ধর্মপল্লীতে এসে “কাঁঠাল ফান্ড”-এর ব্যাপারে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন নাই। ফাদার সালিভ্যানের নিয়োগ করা স্বর্গীয় মাইকেল কেরু মাষ্টার তার অনুপস্থিতিতে “কাঁঠাল ফান্ড”-এর কাজ মূলতঃ একাই চালিয়ে যান। ১৯৬৩ সনের প্রথম দিকে ফাদার সালিভ্যান পুনরায় ধরেন্ডা ধর্মপল্লীতে চলে আসেন এবং তাঁর আরম্ভ করা সকল কাজে নিজেকে পুনঃনিয়োজিত করেন। এবার তিনি কেবল “কাঁঠাল ফান্ড” রূপ সমিতি নিয়েই ব্যস্ত থাকলেন না । তাঁর দিব্য চোখে দেখতে পেয়েছিলেন, ধরেন্ডা ধর্মপল্লীর জনগণের উন্নয়ন ও মঙ্গলই কেবল অত্র এলাকার উন্নতি নয়। তাই অত্র এলাকার পাঁয়ে হাঁটা কাঁচা রাস্তা গুলোর উন্নতিকল্পে মাটি ভরাট কাজে ব্যাপকভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেন। অত্র এলাকার জনগণের এ কথা ভুলার নয় যে কি রকম প্রতিকূল অবস্থায় ও পরিস্থিতিস্তে মাথায় ভারী বোঝা নিয়ে সাভার বাজারে যেতে হত, তাদের কৃষি পণ্য ও কাঁঠাল ফল বিক্রয় করতে। ফাদার নিজ দায়িত্বে সাভার -বিরুলিয়া কাঁচা রাস্তার প্রায় চার মাইল পর্যন্ত মাটি ভরাট করার কাজ সুষ্ঠুভাবে করে দেন। ফাদারের মাটি কাটা কাজে ব্যক্তিগত ভাবে সহায়তা দেন রাজাসন গ্রামের মোঃ বক্স আখন্দ। সাভার - বিরুলিয়া রাস্তায় মাটি কাটার কাজের ফলশ্রতিতে এলাকার “গোদেরা ঘাটের” পাকা পুলের ব্যবস্থা করে সাভার ইউনিয়ন পরিষদ। এই পাকা পুল নির্মাণে ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালন করেন দক্ষিণ রাজাসনের মৃত আবদুল আলি (ফালাইনা মেম্বার)। এ ছাড়া, ধরেন্ডা, রাজাসন, দেওগাঁও ও কমলাপুর এই চার গ্রামের যাতায়াতের কাঁচা রাস্তা গুলোর উন্নয়ন কাজও তিনি সুন্দরভাবে করে দেন।

অত্র ধরেন্ডা মিশনের ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়ার জন্য কোন উচ্চ বিদ্যালয় ছিল না। প্রায় ৫ মাইল কর্দমাক্ত রাস্তা পায়ে হেঁটে এলাকার ছেলেমেয়েরা সাভার উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে যেত। উচ্চ শিক্ষার এ দুরবস্থার কথা চিন্তা করে ১৯৬৮ সনের শেষার্ধে মিঃ মারিয়ানু কস্তা, মৃত শ্রদ্ধেয় এলিক ডি’ রোজারিও (মাষ্টার) ও মিঃ যোসেফ কস্তা একত্রে প্রাথমিকভাবে শ্রদ্ধেয় ফাদার সালিভ্যানের শরণাপন্ন হন, যাতে তিনি ধরেন্ডায় একটি উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি প্রদান করেন। ফাদার সালিভ্যানের কঠিন শর্ত সাপেক্ষে ১৯৬৯ সনের জানুয়ারী মাসে ধরেন্ডা সেন্ট যোসেফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি ও পরিচালনার সুব্যবস্থা করে দেন। শ্রদ্ধেয়া সিষ্টার ফিলমিনা, এসএসআরএ অদৃশ্যভাবে সহযোগিতা প্রদান করে এ স্কুল পরিচালনার কাজ আরও সহজতর করে দেন। ধরেন্ডা সেন্ট যোসেফ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ায় অত্র এলাকায় জনগণের নিকট ফাদার সালিভ্যান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

ফাদার সালিভ্যানের “কাঁঠাল ফান্ড” রূপ সমিতির পরবর্তী রূপান্তরই হল “ধরেন্ডা খ্রীষ্টান সমবায় সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি লিমিটেড”। তাই তার বিচিত্র কর্মকান্ডের কিছু বিবরণ না দিলে তার প্রতি অন্যায় করা হবে বলে মনে করি। কাঁঠাল ফান্ডের ও রাস্তা মেরামত কাজে নগদ টাকার আদান-প্রদান হত যথেষ্ট। তাই ফাদার পড়ে গেলেন কিছু দুষ্টলোকের দৃষ্টিতে। এ সময়টি ছিল ১৯৭১ সনের দেশের মুক্তিযদ্ধের প্রারম্ভিক প্রস্তুতির স্পর্শকাতর সময়। এ সময় ফাদারের ঘরে দুইবার ডাকাতি হয়। একবার তার হাত পা বেঁধে অনেক মারধরও করা হয়। এ রকম ঘটনায় তিনি ভেঙ্গে পড়েন ও নানাবিধ অসুস্থতার উপসর্গে ভুগতে থাকেন। ইতোমধ্যে আরম্ভ হল দেশে মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সনের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সাভার এলাকায় শত্রু মুক্ত হয়। তখন এলাকায় নিহত অজানা অনেক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃতদেহ ফাদার সালিভ্যান নিজ দায়িত্বে ও খরচে অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় সমাধিস্থ করেন। দেশ মুক্ত হওয়ার পর তিনি পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৯৭২ সানের জানুয়ারী মাসে চলে যান ঢাকায় চিকিৎসার জন্য। এই সনামধন্য পুরুষ পরবর্তীতে ধরেন্ডায় আর ফিরে আসেন নাই।

ধরেন্ডা ধর্মপল্লী হতে শ্রদ্ধেয় ফাদার সালিভ্যান চলে যাওয়ার পর ১৯৭৩ সনের ফেব্রুয়ারী মাসে আসেনশ্রদ্ধেয় ফাদার হাউজার, সিএসসি। ফাদার সালিভ্যান চলে যাওয়ার এবং ফাদার হাউজার এসে দায়িত্ব নেওয়া এই সময়টি ছিল “কাঁঠাল ফান্ড”-এর একটি স্থবির সময়কাল। এ সময় দেখা দেয় “কাঁঠাল ফান্ড”-এর হিসেবে এলোমেলো অবস্থা। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে মিশনের ফাদারের ঘরে দুইবার ডাকাতি হওয়ায় “কাঁঠাল ফান্ড”- এর টাকা পয়সা, জামানত স্বরূপ রাখা মহিলাদের অলঙ্কার, খাতাপত্র ইত্যাদি খোয়া যায়। এ সময় মিঃ মাইকেল কেরু মাষ্টার একক ভাবে “কাঁঠাল ফান্ড”-এর কাজ চালিয়ে যান। অনেক সদস্য-সদস্যা ঋণের টাকা ফেরত এবং শেয়ারের টাকা জমা দিচ্ছিলেন না। “কাঁঠাল ফান্ড” এর নির্ভরযোগ্য দলিল বা হিসাবের কাগজপত্র বলতে সদস্য-সদস্যাদের পাশ বই এবং মিশনে রাখা বড় লেজার বই ছিল একমাত্র সম্বল।

ফাদার হাউজার “কাঁঠাল ফান্ড”-এর এলোমেলো দুরবস্থা দেখে ধর্মপল্লীর সর্বসাধারণের মিটিং ডেকে সকল সদস্য-সদস্যাদের পরামর্শ কামনা করেন। কিভাবে একটা সুষ্ঠু হিসাব নিকাশ করা যায় । এ সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, “কাঁঠাল ফান্ড”- এর সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে, আর্থিক লেন-দেনের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র ঠিক করা হউক। অত্র সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ গুরু দায়িত্ব অর্পণ করা হয় দেওগাঁও গ্রামের মিঃ যোসেফ কস্তা এবং ধরেন্ডা গ্রামের মিঃ সাইমন এ, পেরেরার উপর। মিঃ যোসেফ কস্তা ও মিঃ সাইমন এ, পেরেরা নিজেদের কাজে ব্যস্ত থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে অল্প দিনের মধ্যে “কাঁঠাল ফান্ডে”- এর আর্থিক লেনদেনের দায়-দায়িত্বের একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। এ প্রতিবেদনে দেখা যায় সদস্য-সদস্যাদের শেয়ারের ও লভ্যাংশের জমা টাকা, তাদের মধ্যে ঋণ হিসাবে দেওয়া রয়েছে। আরও দেখা যায় সমিতিতে ৭,০০০/- টাকার মত ঘাটতি রয়েছে।

১৯৭৩ সনের মাঝামাঝি সময়ে “কাঁঠাল ফান্ড”-এর সদস্য-সদস্যাদের এক সভা ডাকা হয়। এ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে পূর্বের “কাঁঠাল ফান্ড” রূপ সমিতির নাম পরিবর্তন করে নতুন ভাবে নামকরণ করা হয় - “ধরেন্ডা খ্রীষ্টান সমবায় ঋণদান সমিতি”। এ সভাতেই সমিতির নূতন ও প্রথম পরিচালকমন্ডলীর কর্মকর্তাদের মনোনীত করা হয়। নিম্নে কর্মকর্তাদের নাম পদ মর্যাদা অনুসারে উল্লেখ করা হলঃ

ক্রমিক নং নাম পদবী
মিঃ যোসেফ কস্তা প্রেসিডেন্ট
মিঃ মাইকেল রোজারিও ভাইস প্রেসিডেন্ট
মিঃ মারিয়ানু কস্তা সেক্রেটারী
মিঃ সাইমন এ. পেরেরা ম্যানেজার
মিঃ প্রভাত ডি রোজারিও কোষাধ্যক্ষ
মিঃ সুনীল কোড়াইয়া সদস্য
মিঃ মানুয়েল পিউরিফিকেশন (মানু কেরানী) সদস্য

এ নবগঠিত পরিচালক মন্ডলীর কর্মকর্তাগণ ১৯৭৩ সনের জুলাই মাসে শ্রদ্ধেয় ফাদার হাউজারের নিকট হতে সমিতির পূর্ণ দায়িত্ব ভার গ্রহণ করে কাজ পরিচালনা করে যান। এ সময়ে নুতন ভর্তি ফরম, ঋণের আবেদন পত্র, রশিদ বই, পাশ বই, লেজার বই, নতুন সংবিধান ইত্যাদি যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা হয়। এ নতুন ব্যবস্থায় পরবর্তীতে সংবিধান মতে সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে।

১৯৮৫ সনের ১০ই অক্টোবর এ সমিতি সরকারীভাবে রেজিষ্ট্রী করানো হয় এবং রেজিষ্ট্রী নম্বর হয় ৮ এবং এর নাম হয় ধরেন্ডা খ্রীষ্টান সমবায় ঋণদান সমিতি লিমিটেড। সমিতির পুনঃ রেজিষ্ট্রেশন হয় ৩/১২/২০০৩ তারিখে যার নম্বর হয় ৪২। তখন সমিতির নাম হয় ধরেন্ডা খ্রীষ্টান সমবায় সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি লিঃ। এখানে সমিতি পরিচালনার ঘটনা প্রবাহের একটি উল্লেখযোগ্য অপ্রিয় কথা প্রকাশ না করলে, “ইতিকথার” একটি দিক অজানা থেকে যাবে। ১৯৮৪-৮৫ আর্থিক বৎসর হতে ১৯৮৯-৯০ আর্থিক বৎসর কালে সমিতির উপর নেমে আসে এক অযাচিত ও অকল্পনীয় আঘাত। এ আঘাতে সমিতির সদস্য-সদস্যাগণের মধ্যে একটি অনাস্থার ভাব চলে আসে এবং সমিতি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এরকম অবস্থার সৃষ্টি হয় তখনকার সমিতির কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর চরম অবহেলা, দায়িত্বহীনতা ইত্যাদির কারণে। এরকম দুঃসংবাদে সাধারণ সদস্য-সদস্যাগণ হতাশ হয়ে অনেকে ঋণ ফেরত দেওয়া বন্ধ করে দেয় এবং নিজ নিজ শেয়ারের জমা টাকার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন।

উল্লেখিত নগদ অর্থের ঘাটতিজনিত কারণে বহুবিধ ঘাত প্রতিঘাতের আবর্তনের পর এবং সমিতিকে এ দুরবস্থা হতে রক্ষা করার জন্য ধরেন্ডা ধর্মপল্লীর কিছু তরুণ ব্যক্তি এগিয়ে আসেন এর নেতৃত্ব দেবার জন্য এবং ১৯৯২ সনের ৩রা জানুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে সমিতির কার্যভার গ্রহণ করেন।

সমিতির এরকম চরম বিশৃংখলা ও নড়বড়ে অবস্থায় তখনকার বোর্ড কার্যভার গ্রহণ করে এবং তড়িৎ গতিতে দায়ী ব্যক্তিদের অধিকাংশের নিকট হতে ঘাটতি টাকা আদায় করতে সক্ষম হন। এ টাকা আদায়ের ঘটনা সাধারণ সদস্য-সদস্যাগণের মনে নুতন আশা ও প্রাণের সঞ্চার করে। ফলে সমিতির পরিচালনা কাজ সুষ্টুভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং নতুন সদস্য/সদস্যা সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। সমিতি বর্তমানে খরস্রোতা নদীর ন্যায় প্রবাহমান।

- লেখকঃ প্রদীপ স্ট্যান্লী গমেজ, এফসিএমএ, সিএফসি